NEED4ENGINEER.COM , ২০১১ সাল থেকে অলাভজনক ভাবে নির্মাণ কাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে

চুন ( লাইম )

Md. Ashraful Haque, 17-Nov-2012
ভিউ : 31024

বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীতে চুন কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া দেয়ালের চুনকাম করতেও চুন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সিমেন্ট মসলার মতো চুন মিশ্রিত করেও চুর্ণক মসলা তৈরি করা যায়। সিমেন্ট তৈরিতে বিশেষ করে কম্পোজিট সিমেন্টে চুন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুন সিমেন্টের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সিলিকেট ও ক্যালসিয়াম আ্যালুমিনেট তৈরি করে। এতে চুনের পরিমাণ কম হলে সিমেন্টের শক্তি কম হয় এবং তাড়াতাড়ি জমাট বাঁধে। আবার সিমেন্টে চুনের পরিমাণ বেশি হলে ব্যবহারের পর আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং নির্মাণ কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ অধ্যায়ে চুন সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো। ৬.১ চুন রাসায়নিক দিক হতে মোটামুটিভাবে অবিশুদ্ধ ক্যলসিয়াম অক্সাইডই (CaO) চুন হিসেবে পরিচিত। বিশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO3) সহযোগে শেল, কোরাল, কংকর একত্রে মিশ্রিত করে উচ্চ তাপে পোড়ালে চুন পাওয়া যায়। নির্মাণ কাজে এটি বন্ধন সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বানিজ্যিক ভিত্তিতে চুন তৈরী হয় চুনাপাথরের বোল্ডার থেকে। ৬.২ চুনের শ্রেণিবিভাগ চুন প্রধানত তিন প্রকার। যথা-

  1. ধনিক চুন (Fat Lime/ Pure Lime)
  2. ঔদক চুন (Hydraulic Lime)
  3. প্রাকৃতিক চুন (Natural Lime)
ধনিক চুন (Fat Lime/ Pure Lime) : মোটামুটি বিশুদ্ধ চুন। পানির সংস্পর্শে এর আয়তন ২/৩ গুণ বৃদ্ধি পায় বলে একে ধনিক বা স্থুল চুন বলে। এর রঙ প্রায় সাদা বর্ণের হয়। পানির নিচে এ চুন জমাট না বেঁধে বরং বিযোজিত হয়ে পড়ে। বাতাসে খোলা অবস্থায় রাখলে পাউডারে পরিণত হয়। ভূমির ওপরের কাজ, জলছাদ, মেঝে, প্লাস্টারের ফিনিশিং কোট, চুনকাম, লাইম পানিং ইত্যাদি কাজে এ চুন ব্যবহার করা হয়। ঔদক চুন (Hydraulic Lime) : এ চুনে অপদ্রব্যের পরিমাণ খুব বেশী। এ চুন পানির নিচে এবং বায়ু অপ্রবেশ্য স্থানে জমাট বাঁধতে পাড়ে এবং কঠিন হতে পাড়ে। এর রঙ সাদা হয় না। ফেটে যাওয়ার প্রবণতা কম। দালানের ভিত্তির গাথুনি, পানির নিচের কাজে, বাঁধ, জলছাদ, পাতলা দেয়াল নির্মাণ, গাথুনি এবং প্লাস্টারের কাজে এ চুন ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক চুন (Natural Lime) : এক ধরনের ঔদক সংযোজক পদার্থ এবং ঔদক চুনাপাথরের সাথে মোটামুটি মিল রয়েছে। বিদাহী চুন (Quick Lime) : চুনাপাথরকে উচ্চতাপে পোড়ানোর অব্যবহিত পরে যে চুন পাওয়া যায় তাকে বিদাহী চুন বলে। এ চুন নিজের অবস্থায় বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে কলিচুনে পরিণত হয়। এর রঙ সাদা বা ধূসর বর্ণের। কলিচুন (Slaked Lime) : বিদাহী চুনকে পানিযোজিত চুনে পরিণত করতে যে পরিমাণ পানি দরকার হয়, তার চেয়ে অধিক পানি সংযোজন করে যে চুন পাওয়া যায় তাকে কলিচুন বলে। ৬.৩ চুনের গুণাগুণ নিম্নে ভালো চুনের বৈশিষ্ট্যগুলো দেয়া হলো-
  1. কম বা বেশী পোড়া কণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে।
  2. অপদ্রব্য (যেমন- সিলিকা, এলুমিনা ইত্যাদি) মুক্ত হবে।
  3. অবশ্যই জ্বালানির ছাইমুক্ত হতে হবে।
  4. শক্ত পিন্ডাকারে থাকবে।
  5. সহজে পানিযোজিত করা যাবে।
  6. সকল কণা বি.এস. ৬৪ নং চালুনী অতিক্রম করবে।
  7. প্রাথমিক জমাটবদ্ধতার সময় ২ ঘন্টার কম হবে না এবং চূড়ান্ত জমাটবদ্ধতার সময় ৪৮ ঘন্টার বেশী হবে না।
  8. সাউন্ডনেসের মান ১০ মিলিমিটার অতিক্রম করবে না।
৬.৪ চুনের ব্যবহার আমরা যে সমস্ত কাজে চুন ব্যবহার করে থাকি তার একটি তালিকা নিম্নে দেয়া হলো-
  1. চুনকামের কাজে।
  2. ‘লাইম পানিং’ এর কাজে।
  3. চূর্ণক মসলা তৈরীর কাজে।
  4. চূর্ণক কংক্রিট তৈরীর কাজে।
  5. বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে। যেমন-
  •               সিমেন্ট তৈরীতে।
  •               কাঁচ তৈরীতে।
  •               কস্টিক সোডা তৈরীতে।
  •               ব্লিচিং পাউডার তৈরীতে।
  •               সোডা লাইম তৈরীতে।
  •               বিভিন্ন ঔষধ তৈরীতে।